স্টাফ রিপোর্টার, পেকুয়া:

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে পেকুয়া উপজেলায় জমজমাটভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে প্রার্থীরা।

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী, ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে পাঁচ প্রার্থী ও ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে তিন প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন।

জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি-জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন। সেই বর্জনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ভারতে অবস্থানরত সালাউদ্দিন আহমেদের কথা মান্য করে চেয়ারম্যান পদে যুবদল সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আহসান উল্লাহ তাদের নিজ নিজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি উপজেলা বিএনপির সদস্য শাফায়েত আজিজ রাজু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ শুরু করেন। তাতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে শোকজ দেয়ার পর কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্বাহী কমিটি যুবদল নেতা রাজুকে বহিষ্কার করে প্রজ্ঞাপন জারী করেন৷ এরপর থেকে নির্বাচনী মাঠে এক প্রকার একা ও কোণঠাসা হয়ে পড়েন সাবেক দুইবারের এ উপজেলা চেয়ারম্যান। এমনকি বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাজু বিরোধী প্রচারণা শুরু করেন।

বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাবি, সারাদেশে বিএনপি সকল ধরণের ভোট বর্জন করে আসছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা ছাড়াও কক্সবাজারের কৃতি সন্তান ভারতে অবস্থানরত সালাউদ্দিন আহমেদের নির্দেশ রয়েছে ভোট বর্জনের জন্য। সেই নির্দেশ অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ।

কিন্তু সালাউদ্দিন আহমেদের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চরম অসম্মান শুরু করেছেন রাজু। এমনকি তার অনুগত সমর্থকদের দিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদের নামে কুৎসা রটনা করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। তাতে চরমভাবে অপমানবোধ করেন পেকুয়ার বাসিন্দা জাতীয় পর্যায়ের এ নেতা। যার কারণে ভোট বর্জন নয় ভোটের মাঠে রাজুর একঘেয়েমিকে প্রতিশোধ হিসেবে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে রাজুকে কোণঠাসা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়েন সালাউদ্দিন আহমেদ সমর্থকগোষ্টি ও বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা সফলও হন রাজু বিরোধী প্রচারণায়। যেইখানেই প্রচারণায় যাচ্ছেন রাজু সেখানেই সরে যাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এমনকি সাধারণ মানুষও রাজুর গণসংযোগে তেমন ছাড়া দিচ্ছেনা, নেতাকর্মীরা এমন দাবি করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে।

নেতাকর্মীরা আরো দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা কথা সবচেয়ে বেশি প্রচার হচ্ছে তা হলো চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সাবেক সাংসদ জাফর আলম এর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভোটের মাঠে সালাউদ্দিন বিরোধী গ্রুপে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

তবে রাজুর সমর্থক বিজয় বলেন, শাফায়েত আজিজ রাজু দুইবারের জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান। সাধারণ জনগণের মাঝে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। এছাড়াও ওনার পিতা এই অঞ্চলের সাবেক এমপি। দল বহিষ্কার করলেও দলের বড় একটি অংশ ওনাকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। যেখানেই আমরা প্রচারণায় যাচ্ছি সাধারণ জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আগামী ২১ তারিখ তার প্রমাণ হবে।

উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ হোছাইন বলেন, প্রকৃতভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তারা কিছুতেই দলের সাথে বেইমানী করতে পারেনা। রাজু আমাদের সকলের প্রিয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের সাথেও চরম বেইমানী করেছেন। যার কারণে আমরা তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছি। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সাধারণ জনগণও তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যা আমরা মাঠে দেখতে পেয়েছি।

উপজেলা যুবদলের সভাপতি সদ্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, রাজনীতি করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। প্রিয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নির্দেশনায় আমি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছি, গণতন্ত্র রক্ষার মিশনে শামিল হওয়ার জন্য।যুগে যুগে আমরা দলের ভিতর অনেক বিশ্বাসঘাতক দেখেছি,তবে সকলের পরিনতি ছিল সুস্পষ্ট,রাজু ভাইও দলের সাথে বেইমানী করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমরাও মনে করছি তিনি দল,আমাদের অভিভাবক জনাব সালাউদ্দিন আহমদ সাহেব ও নেতাকর্মীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। যার কারণে সবাই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ বলেন, দলের সাথে বেইমানী করে কোন রাজনীতিবিদ সফলতা অর্জন করতে পারে নাই। শুধু এইটুকু বলবো বিএনপির কোন প্রার্থী নাই। তাই নেতাকর্মীদের সকল প্রকার প্রচার প্রচারণা থেকে এবং ২১ তারিখ ভোট বর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।